শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন
হেলাল আহম্মেদ(রিপন) পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ এমন নাম না জানা অনেক গাছ আমাদের দেশে আনাচে-কানাচে অজত্নে-অবহেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, অনেক নাম না জানা উদ্ভিদ, আমরা কোনটির নাম জানি আবার কোনটির নাম জানি না তেমনি অপরিচিত একটি গাছ বাম তার হাতিশুঁড়।
আমাদের দেশের ঝোপঝাড়ে অথবা গ্রামের ভিটে রাস্তার ধারে, একটু উঁচু জায়গায় অযত্নে এই আগাছা বেড়ে ওঠে। গ্রামবাংলায় এ গাছের ছড়াছড়ি থাকলেও, বর্তমানে এর সংখ্যা অনেকটাই বিলীনের পথে। আমাদের দেশে এই গাছ অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন, হাতিশুঁড়ি, হাতিশুণ্ডি, হস্তীশুণ্ডী, শ্রীহস্তিনী, মহাশুণ্ডী ইত্যাদি। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর জানাগেল বৈজ্ঞানিক নাম হেলিওট্রোপিয়াম ইনডাম এবং ইংরেজি নাম ভারতীয় হেলিওট্রোপ বা ভারতীয় টার্নসোল। হাতিশুঁড় একপ্রকার একবর্ষজীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ।
এই উদ্ভিদের আদিনিবাস এশিয়া মহাদেশে। এ গাছ ১৫ থেকে ৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর কান্ড রোমযুক্ত।পাতা গাঢ় সবুজ। পত্রপিঠ অমসৃণ, খসখসে ও কিনারা ঢেউ খেলানো। এর ফুলে উটকো গন্ধও পাওয়া যায়। কাণ্ডের শীর্ষে লম্বা ও বাঁকানো পুষ্পদণ্ড জুড়ে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। বাঁকা পুষ্পদন্ড দেখতে হাতির শুঁড়ের মত বলেই এর নাম হাতিশুঁড়। ফুলের রঙ সাধারণত সাদা, তবে হালকা বেগুনিও হতে পারে। আকৃতি অনেকটা মাইক এর মতো। এর পাপড়ি একটি, তাতে ৫টি খাঁজ থাকে। অনেকটা কলমি ফুলের মতো।
সারা বছর ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুটতে দেখা যায়। গর্ভাশয় চারখন্ডিত। ফল ও বীজ ক্ষুদ্র। ভেষজ চিকিৎসায় এর অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে। এই গাছে নানারকম জৈব উপদান পাওয়া গেছে। যেমন ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন অ্যালকালয়েড্স, হেলিওট্রিন ইত্যাদি। শিকড়ে আছে এসট্রাডিওল। বিষাক্ত কোনো পোকার কামড়ে শরীরের কোনো স্থান ফুলে গেলে এবং সে স্থানে জ্বালাপোড়া হলে এ উদ্ভিদের পাতা বেটে এর রস লাগালে উপকার পাওয়া যায়। আঘাতজনিত ফোলায়- পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালে, ফোলা এবং ব্যথা কমে যায়। ঠান্ডা লেগে হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে বা বাগী ফোলা অর্থাৎ উরু ও তলপেটের মাঝখানে, কুচকির ডান ও বাম দিকে যেকোনো দিক ফুলে গেলে এ গাছের পাতা বেটে হালকা গরম করে আক্রান্ত জায়গায় লাগালে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়। কোন কারনে চোখ টকটকে লাল হলে, কড় কড় করছে- মনে হচ্ছে বালি পড়েছে। এমনটা হলে হাতিশুঁড় গাছের পাতার রস অব্যর্থ ওষুধ। সর্দি লাগলে এই হাতিশুড়ের পাতা ছেচে দুই চামচ পরিমাণ রস খেলে সর্দি ভাল হবে। একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুড় গাছের পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে দিলে কিছুদিন ব্যবহারে একজিমা সেরে যাবে। টাইফয়েড রোগে এই উদ্ভিদটির পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান।
এর পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভাল হয়। দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাতিশুরের মূল চিবালে মাড়ি ফোলা কমে যায়। ব্রন হলে বা এর দাগ হয়ে গেলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করতে যাবার ১ঘন্টা আগে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সারে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না,এমনটাই তথ্য মেলে।